মামলা তুলে না নেয়ায় অসহায় নারীর পরিবারকে সমাজচ্যুত
- আপলোড সময় : ১৭-১১-২০২৪ ০৭:৩৬:০৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৭-১১-২০২৪ ০৭:৩৬:০৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের আব্দুল্লাহপুর গ্রামে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা তুলে না নেয়ায় সমাজচ্যুত করা হয়েছে অসহায় নারীর পরিবারকে। গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামের মহাপ্রভুর আখড়ায় এক সভায় সমাজচ্যুতির সিদ্ধান্ত গ্রাম্য মাতব্বররা। সভার আলোচনায় অংশ নেন গ্রাম্য সমাজের ৫৫ জন।
জানাযায়, গত ১৮ অক্টোবর ‘বিরাশি গাঁইয়া’ সালিশে ইউনিয়নের বিশিষ্টজনের মতামতের ভিত্তিতে সমাজচ্যুতি না করে মিলেমিশে সমাজে চলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বুধবার রাতে আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ৫৫ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে সভায় নতুনভাবে সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়- ধর্ষিত নারীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার। সভায় সভাপতিত্ব করেন আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মৃত সনাতন দাশের ছেলে সুনীল দাশ। আলোচনায় অংশ নেন একই গ্রামের সুবাস দাশ পিতা মৃত সুরিন্দ্র দাশ, বিধান দাশ পিতা মৃত বিধু ভূষণ দাশ, লক্ষণ দাশ পিতা মৃত খোকা দাশ, অখিল দাশ পিতা মৃত অশ্বিণী দাশ, দীনেশ ঘোষ পিতা মৃত টেনু ঘোষ, শুভ ঘোষ পিতা দীগকান্ত ঘোষ, বেণু ঘোষ পিতা দ্বিগেন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দাশ পিতা মৃত সুধীর দাশ, কৃষ্ণ দাশ পিতা মৃত হরকুমার দাশ, বলাই দাশ পিতা কিরঙ্গ দাশ, রাশিন্দ্র দাশ পিতা মৃত রাজিন্দ্র দাশ, টিপু মজুমদার পিতা কৃপেশ মজুমদার, মালিন্দ্র দাশ পিতা মৃত কুমোদ দাশ, অজিত দাশ ও অজই দাশ পিতা মৃত গোপিকা দাশ, বিনয় ভূষণ দাশ, কিরঙ্গ দাশ প্রমুখ।
সভায় আলোচনা হয় যে, এই পরিবারের লোকজনকে ধর্মীয় কোনো আচার অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ দেওয়া যাবে না। ভালমন্দে তাদেরকে দেখাশোনা করা যাবে না। উঠবস করা যাবে না। রাস্তাঘাটে চলাফেরায় প্রকাশ্য বাধা না দিয়ে এড়িয়ে চলা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের আব্দুল্লাহপুর গ্রামে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ দুপুরে জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়ভাবে ঘটনার সমাধান না হওয়ায় ওই বছরের ৩০ আগস্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের হয়। যার নং-৪২৬/২০২২ইং। মামলাটি এখনও বিচারাধীন আছে।
ভিকটিমের স্বজনরা জানান, আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কটন দাশের ছেলে প্রজেশ দাশ ২০২২ সালের ৩০ মার্চ দুপুরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। এরপর থেকে অভিযুক্তের আত্মীয়-স্বজনেরা গ্রামে প্রভাব খাটিয়ে ধর্ষিতার পরিবারকে নানাভাবে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করে। তবে নির্যাতিতার পরিবার মামলায় অনড় থাকে। এই কারণে গত বুধবার এই পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। অপরদিকে, অভিযুক্তকে আইনী শাস্তি থেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।
সুবাস দাশ বলেন, বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টায় গ্রামের মহাপ্রভুর আখড়ায় সভার মাধ্যমে বিরাশীগাঁওয়ের পঞ্চায়েতের দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে। ওইদিনের সভায় ৫৫জন গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। আমি বলেছি কাউকে সমাজচ্যুত করা যাবে না। তবে মেয়েকে শুদ্ধ হয়ে সমাজে উঠতে হবে।
বিধান দাশ বলেন, আমরা মনিন্দ্র দাশের পরিবারকে কোনো সমাজচ্যুতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করিনি। মহাপ্রভুর আখড়ায় আমরা কীর্তন নিয়ে আলোচনা করেছি।
লক্ষণ দাশ বলেন, বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টায় গ্রামের মহাপ্রভুর আখড়ায় সভার মাধ্যমে বিরাশীগাঁওয়ের পঞ্চায়েতের দেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক থাকবে আমি মতামত দিয়ে চলে আসি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক বলেন, এমন ঘটনার খবর আমার জানা নেই। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ